অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাস বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। অন্তত চার জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকার তাপমাত্রাও শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। সেই সঙ্গে তাপমাত্রা কমায় ও কুয়াশা বেশি থাকায় রাজধানীর বায়ুর মান দিন দিন অস্বাস্থ্যকর হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে সর্দি, কাশি ও হাঁপানিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। কনকনে ঠাণ্ডা রাজধানীসহ সারাদেশের জনজীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে স্বস্তি।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টানা দ্বিতীয় দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকাল নয়টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস জানায়, কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে তখন সেই অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ চলছে বলে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬-৮ ডিগ্রিতে থাকলে তাকে মাঝারি এবং ৬-এর নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। সিলেটে তাপমাত্রা মাত্র ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমলেই চলতি শীতে প্রথমবারের মতো মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।
শ্রীমঙ্গলের দিনমজুর মো. দেলোয়ার বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে শীতের সময় সবসময়ই ঠাণ্ডা বেশি থাকে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ । প্রতিদিন কাজ না করলে আমাদের সংসার চলে না। কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত কুয়াশা ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে আমরা কাজে যেতে পারছি না।’
ঘন কুয়াশার কারণে দেশের সড়ক-মহাসড়কে সকালেও হেডলাইন জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। কিছু কিছু স্থানে কুয়াশা এত ঘন হয়ে জমে যে ২০ হাত দূরের জিনিসও দেখা যায় না।
এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে স্বাভাবিকভাবে দুইদিন ধরে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ঘাটগুলোতে আটকে পড়ছে যাত্রী ও যানবাহন। আটকে পড়া এসব যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরি পার হতে। যাত্রীদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই ফেরি ঘাটগুলোতে। খাবার, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এসব যানবাহন শ্রমিক ও যাত্রীদেরকে। বিশেষ করে এই শীতের মধ্যে বেশি অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে শিশু ও নারী যাত্রীদের।
সিলেট, শ্রীমঙ্গল, নওগাঁ, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হিমশীতল বাতাসে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের দেখা মিলছে। হাড় কাঁপানো শীতের কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য গরীব মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে একটু উষ্ণতার পরশ নিচ্ছেন। কুয়াশার চাদরে সারাদিন সূর্য ঢাকা থাকায় ঘর থেকে বেরিয়ে কাজের সন্ধানেও অনেকে যেতে পারেন না। এর ফলে দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান, ঠেলাচালক, কৃষি শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের আয় নেই। দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে কাজের আশায় প্রচণ্ড শীতেও অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন, কিন্তু মিলছে না কাজ। কাজ না পাওয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।
শীতে কাবু হওয়া আরমান হক বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতিদিন কাজ না করলে আমাদের সংসার চলে না। কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত কুয়াশা ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে আমরা কাজে যেতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।’
শীতের কষ্ট থেকে বাঁচতে ফুটপাত থেকে অভিজাত মার্কেট-শপিংমল পর্যন্ত গরম কাপড়ের বেচাকেনা জমজমাট। কুয়াশা ও শীতের কাঁপন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে জ্বর-সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ হরেক শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড় বেড়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মনির হোসেন জানান, ‘তীব্র শীতের কারণে সর্দি, কাশি ও হাঁপানিজনিত রোগী বেশি দেখছি। আগের তুলনায় সদর হাসপাতালে সর্দি, কাশি ও হাঁপানিজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। আমরা সঠিকভাবে চেষ্টা করছি তাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, ‘দেশের বেশির ভাগ এলাকায় এখন শীতল আবহাওয়া এবং কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে পারে আরও দুই-তিন দিন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে শীত আরও বাড়তে পারে।’
Leave a Reply